হাজার বছর ধরে আমি কেঁদে চলেছি পৃথিবীর বুকে

জন্মের সময় আমি খিল খিল করে হাসতে হাসতে বের হলাম। বাবা মা পড়ে গেল মহা টেনশনে। ছেলে না কাঁদলে তো সমস্যা। যেভাবেই হোক, ছেলেকে কাঁদাতেই হবে। নার্স মায়ের পারমিশন পেয়ে শুরু করলো আমাকে মাইর। ছোট্ট একটুখানি শরীর, তার'পরে হাসির সাজা হিসেবে মাইর- সহ্য হল না। কেঁদে দিলাম। আমি কাঁদি আর আর মা হাসে। সেই যে আমার কান্না শুরু হল... থামার নাম নেই। আমি যতটা কাঁদি পৃথিবীর আর কোনো পুরুষ মনে হয় এতোটা কাঁদে না। মাঝে মাঝে রেগেমেগে মাকে বলি, মারে সেইদিন না কাঁদালে কী হত না??
ওই এক ভুলের ফল আমি সারাজীবন ধরে ভোগ করে যাচ্ছি...
রেজাল্ট ভাল হলে খুশিতে কাঁদি,
খারাপ হলে কষ্টে কাঁদি...
মাইর খেলে ব্যাথায় কাঁদি,
না খেলে আনন্দে কাঁদি,
প্রপজ পেলে উত্তেজনায় কাঁদি,
রিফিউজ হলে অন্তরভঙ্গে কাঁদি...
হাজার বছর ধরে আমি কেঁদে চলেছি পৃথিবীর বুকে.........
এটাই একমাত্র সমস্যা না। আমার জন্ম হয় প্রবল ঝরের সময়। কালবৈশাখীর ঝড়। মাঠ ঘাট, পথ প্রান্তর সব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারই মাঝে আমি উড়তে উড়তে পৃথিবীতে এলাম। আমার আপামনী খুশি হয়ে আমার নাম রাখলো ঝড়ু। বাপের প্রবল আপত্তি এবং মায়ের মুখ বাঁকানোতে সে নাম অবশ্য ধপে টিকলো না। তখন বড় ভাইয়ার নাম, অরিন। সেই হিসেবে আমার নাম রাখা হল, অনিক। টিকলো না এটাও, আমার মাইর খাওয়ার ঘটনা নাকী বড় ভাইয়া শুধু লিখে রাখতো, তাই ছয় বছর বয়সে তার নাম চেঞ্জ হয়ে হল লিখন আর আমার সেই মাইরের ঘটনা মনে রাখার জন্য নাম হল স্মরণ। এই যে নাম হল স্মরণ, এটা আমার জীবনের ২য় ভুল। যে নামের সাথেই স্মৃতি নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায় সে স্মৃতি ভুলবে কীভাবে? তাই, প্রতিটা মুহুর্তে সেই স্মৃতিগুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্রকৃতিগত ভাবে খাওয়ার নিয়মই তো তাই। বাবুর্চি ঘাম ঝরিয়ে রান্না করে আর আমি আপনি সেই খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি...
ও ভাল কথা,হ্যাপি কিস ডে