তৃতীয় শ্রেণী কষ্টে আছে

অভিজিৎ নাস্তিক ছিল, এটা মেনে নেয়া যায়। তিনি অনেক পড়ালেখা করেছেন। এবং পড়তে পড়তে মাথায় একধরনের গোলমাল হয়ে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক না। আমাদের এলাকার 'ডাক্তার সাহেব' ও তো পড়তে পড়তেই পাগল হয়ে গেল। কিন্তু কথা হচ্ছে, অভিজিৎ নাস্তিক সেটার নাহয় যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। সে বেঁচে থাকতে নাস্তিক্যবাদের পক্ষে অনেক যুক্তিও হয়তো দিয়ে গেছেন। কিন্তু আপনি 'ডিজে অরণ্য' যদি নিজেকে নাস্তিক বলে দাবী করেন, সেটা আমি মানবো কিভাবে? আপনি বাপের জন্মেও কখনো গুগোল ঘেঁটে দেখেন নি, সৃস্টি জগতের রহস্য। আপনি ঘেঁটেছেন, কিভাবে মেয়েদের সামনে আপনাকে আরোও সুন্দর দেখা যাবে। অথচ আপনি নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেন। আপনি কেন নাস্তিক, জিজ্ঞাসা করলে আপনার উত্তর হয়, "এই বিজ্ঞানের জুগে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না ডুড!" এই আপনাকেই যদি আমি আবার জিজ্ঞাস করি, কেন বিশ্বাস করেন না ডুড? আপনি তখন চুপসে যান। হয়তো বা কখনো বা বলেন, আমার বস 'গ্যাংনাম আক্কু' বিশ্বাস করে না, তাই আমিও করি না...

এটা হলে ক্যামনে হপে, দুধ? থুক্কু, ডুড?

নাস্তিক মানে কিন্তু ইসলাম বিরোধী না... নাস্তিক মানে গোটা ধর্ম বিরোধী। যে নাস্তিক সে স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে না। সো, সে ইসলাম বিশ্বাস করে না। সে হিন্দু বিশ্বাস করে না।(অথচ হলি খেলে) সে বৌদ্ধ বিশ্বাস করে না। তারা স্বসৃষ্ট মানবধর্মে বিশ্বাস করে। আচ্ছা, কেউ একজন আমাকে দেখাতে পারবে, কোরআনে কোথায় লেখা আছে, তুমি মুসলিম, সো তুমি হিন্দুর মন্দির ভেঙ্গে দাও... অথবা, গীতায় কোথায় আছে, তুমি হিন্দু, সো, মুসলিমের আজানের সময় তুমি আশিকি টু মুভির গান বাজাও...

ব্যাপারটা কোথায় জানেন? অধপতন... নাস্তিক আস্তিক কথাটা কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর আগেও এতটা 'জনপ্রিয়' ছিল না। এই তো বছর কয়েক হল মার্কেট পেয়েছে। এবং এই বছর কয়েকেই আমাদের উপমহাদেশের মানুষের জীবন যাপন আমূল বদলে গেছে। গুগোল এসছে, যেটায় ঘষা দিলে হলিউডের অ্যাঞ্জেলিনা জোলি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়। ফেসবুক এসেছে, মেয়ে এসেছে। সামান্য কয়েকটা সুরসুরি কথা বললেই অথবা দুটো সুরসুরি মার্কা ছবি আপলোড করার নাম এখন প্রগতিশীল। তাইলে আমি কেন রে ভাই, সেই প্রগতিশীল হব না? এই সমাজে তো প্রগতিশীলদের ব্যাপক দাম। একজন প্রগতি তার গতির জোরে টিশার্ট পড়া মেয়েটাকে আচ্ছা মত রং মাখাতে পারে। সেই সাথে শরীরের এখানে ওখানে হাতও মাখাতে পারে। একজন প্রগতি তার গতি জোরে মেয়ের পর্দার পক্ষে না। গরমে মেয়ে কষ্ট পায়। আর ভাই, মেয়েটা গরমে যতটা না কষ্ট পায়, সেই প্রগতি তার চেয়ে বেশী কষ্ট পায় মেয়ের ওড়না ছাড়া শরীর না দেখতে পেয়ে।

একটা ঘটনা বলি। একদম সত্যি। আমার এক ফ্রেন্ড আছে। অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ডই। এক সাথে আবৃত্তি করি। তো আবৃত্তির এক প্রতিযোগিতায় কয়েকদিন আগে টিএসসি গেছিলাম দুজনই। টানা দুইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা থাকতে হয়েছিল। আমাদের দুজনেরই সমবয়সী একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেল। কথায় কথায় প্রথম দিন সেই ফ্রেন্ড জানিয়ে দিল, সে আসলে নাস্তিক। ইশ্বরে বিশ্বাস করে না। কিন্তু মেয়ে আবার ব্যাপক ধার্মিক। সদ্য পরিচিত এত ভাল বন্ধুটা নাস্তিক, এটা সে মানবে কিভাবে? ঘটনা পরের দিন ইউ টার্ন নিল। বিকাল নাগাদ আমার বন্ধুটা জানিয়ে দিল, সেই মেয়ে যদি তাকে ভালবাসে তাহলে সে আল্লাহয় বিশ্বাস করতে রাজি।

তারপর আর কি?
তাহারা সুখে শান্তিতে একই সাথে প্রেম এবং আল্লাহয় বিশ্বাস করিতে লাগিল। তাহারা ভাল আছে।

এই আস্তিক আর নাস্তিক এর বাইরেও কিন্তু একটা শ্রেণি আছে। এরা নামাজ পড়ে না। এরা মন্দিরে যায় না। তবে আল্লাহকে নিয়ে অবমাননাকর কথা শুনলে এঁদের
অন্তর কেঁপে ওঠে। মন্দির ভাঙার খবর তাঁদেরও পিলে চমকে দেয়। এরা নারী সঙ্গে ভীষণ রকম আগ্রহী কিন্তু এই নারীকেই যখন একজন প্রগতি তার গতির ঠ্যালায় উলঙ্গ করতে চায়, তখন তার অপরাধবোধ যাগে।

এই তৃতীয় শ্রেনীতে আমার মত কিছু সাধারণ মানুষ আছে। যারা নামাজ পড়ে না আবার বেনামাজী ব্যাক্তিকে গালাগালি করে। নাস্তিকের আস্তিক সমালোচনা করার অধিকার আছে, আস্তিকের নাস্তিক সমালোচনার অধিকার আছে। কিন্তু আমাদের কোনো সমালোচনা করার অধীকার নেই। তাই কারো এসব পোস্টেই কোনো কমেন্ট করি না। নিজের মনের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো নিজের মাঝেই রাখি।