প্রেম ভালোবাসা নিয়ে আপনের দুটো মত। এক- এটা বড়লোকের ছেলেদের জন্য, ওর মতো মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের জন্য না। কারন, প্রেমিকার ভালবাসার ঘনত্ব নাকি প্রেমিকের মানিব্যাগের পুরুত্ব এর উপর নির্ভর করে! আর দুই- এটা নিছক সময় কাটানো ছাড়া কিছুই না। যাদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তারা এসব ঝামেলায় যায়। আপনের যেহেতু সময় কাটানোর জন্য অনেক ভালো বন্ধু আছে, তাই আপনের এসব ঝামেলায় না গেলেও চলবে! অনেকগুলো ভালো বন্ধুদের মধ্যে একজন, কৃষ্টি। মেয়েটা একেবারে আলাদা ধাঁচের। চঞ্চল, সুন্দরী, মায়াবী- যত ভালো বিশেষণ আছে সবই ওর সাথে যায়।
ফেসবুকে অযথাই বসে ছিল আপন। কাজ নেই। কোন নতুন নটিফিকেশিনও নেই। লগ আউট করে বেড়িয়ে আসবে- এমন সময় কৃষ্টি অনলাইনে এলো।
কৃষ্টি- ki korish re?
আপন- kaj nai… clg jash nai??????
কৃষ্টি- na re dst.. jai nai ajke. Ekta kahini hoiche...
আপন- ki re? ki kahini!! Dal mey kuch sada naki??
কৃষ্টি- nare gadha…. Sada kalo kichui na. ajke onekdin por ovir sathe kotha holo…..
আপন- ovi?? Kon ovire???? Chinlam na to..
কৃষ্টি- are, sei ovi….. j clg a prothom din e amake j props korchilo… tui principle r kache compln dili!
আপন- ki bole?? TC khaoar poreo sokh mite nai!!
কৃষ্টি- ki r bolbe! Puraton prem uthlaye uthse………
এর পরে আপন কেন যেন আর রিপ্লে দেয় নি। দিতে ইচ্ছে করছিল না...... চ্যাট অফ করে রাখল। মানুষ কখনো কখনো অকারনে মন খারাপ করে। হাজার চেষ্টা করেও তখন তারা মন খারাপ হওয়ার কারন খুজে পায় না। যেমনটা এখন আপনের হয়েছে। কেন হয়েছে, কি কারনে হয়েছে ও জানে না!
হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো। কৃষ্টি ফোন দিয়েছে। ধরবেনা ধরবেনা করেও কলটা রিসিভ করে কানে ঠেকিয়ে রাখল ও।
-কিরে, অফলাইন হয়ে গেলি কেন?
-লোডশেডিং।
-ওহ! লোডশেডিং হওয়ার এর আর টাইম পেলনা!! একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলতে চাছিলাম। জানিস, অভি না অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। চেহারাটাও পাল্টে গেছে। এক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
-হু, ভালো।
- আমাকে না ও মজা করে “কৃষ্টি কালচার” বলে ডাকে।
-ভালো
-কি ভালো?
-সব কিছুই ভালো। তুই ভালো। অভি ভালো। সবাই ভালো...
.........মোবাইলটা অফ করে, ছাদের রেলিং ধরে আপন দাঁড়িয়ে আছে। উপর থেকে বেশ লাগছে শহর টাকে। নিরিবিলি না, তবে ভালো লাগার মতো। ছেলে-মেয়েরা একে অপরের হাত ধরে হেটে যাচ্ছে। কেউবা বড় কড়ই গাছটার নিচে, একা একা অপেক্ষা করছে আর সম্ভবত হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে বারবার। আপন নিজের ঘড়ির দিকে তাকাল। ঘড়িটা ওর জন্ম দিনে কৃষ্টি দিয়েছিল। বিকাল পাঁচটা বাজে। অন্যান্য দিন এই সময়টা ও বন্ধুদের সাথে কাটায়। আর কেউ থাকুক বা না থাকুক- সাব্বির, কৃষ্টি আর আপন বিকেলে এক হবেই। কিন্তু আজ আপন একা। ভীষণ একা একা লাগছে ওর। কৃষ্টি মেয়েটা তো ওর জাস্ট বন্ধু। কিন্তু অভির সাথে কথা হয়েছে শুনে আপনের কেন এত মন খারাপ হল, ও বুঝতে পারছেনা। আপন আসলে চায় না, কৃষ্টি আপন ছাড়া আর কার সাথে মিশুক। কেন চায় না? তাহলে কি... তাহলে কি আপন কৃষ্টিকে......?
না এসব কি ভাবছে আবল তাবল! মনকে বসে আনার চেষ্টা করতে লাগলো ও। সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, অনেকদিন। কিন্তু আজকে কেন যেন ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে... শফিক ভাই এর দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে ও কড়ই গাছটার দিকে হাঁটতে শুরু করল...
না এসব কি ভাবছে আবল তাবল! মনকে বসে আনার চেষ্টা করতে লাগলো ও। সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, অনেকদিন। কিন্তু আজকে কেন যেন ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে... শফিক ভাই এর দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে ও কড়ই গাছটার দিকে হাঁটতে শুরু করল...
রাত দুটো বাজলেও আপনের চোখে ঘুম নেই। একের পর এক সিগারেট চলছে। আজ মা বেঁচে থাকলে, এতটা সুযোগ পেতনা। বাবা তাঁর নিজের কাজে ব্যস্ত, সারাদিন টাকার চিন্তা। ছেলেকে দেখার সময় নেই। ফোনটা অন করে দেখল, কৃষ্টির ২৬টা মেসেজ। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েও অভির প্রসঙ্গ ছাড়া আর কিছু খুজে পেলনা। ছেলেটা নাকি ভালো কলেজে পড়ে, পড়াশোনায়ও ভালো হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে... কি মনে করে যেন আপন কৃষ্টিকে ফোন দিল। কল ওয়েটিং!!! হতাশা তখন সর্ব শিখরে পৌঁছেছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছা বা প্রয়োজনীয়তা কোনটিই আপন অনুভব করছে না আর! ড্রয়ার তন্য তন্য করে খুজে ১৩তা ঘুমের ওষুধ পেল এবং............!
আপন ঘুমিয়ে। আর কোনদিন জাগবে নাকি জাগবেনা তা জানি না! জানি এততুকুই, কৃষ্টি জেগে আছে এবং জেগে থাকবে। মনের কথা যখন কেউ বলতে পারে না, তখন অপর জনের বুঝে নিতে হয় নতুবা দেখতে হয় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সমাপ্তি............ :(
