একটি ভালবাসার গল্প, কিছুটা সন্দেহ

আকাশটা মেঘে ঢাকা। সেই সন্ধ্যা রাত থেকে আপন ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ দেখার জন্য। ওর যখন খুব মন খারাপ হয় তখন ও ছাদে এসে চাঁদ দেখে। এতে ওর মন ভাল হয়ে যায়। কিন্তু আজ চাঁদটাও কৃষ্টি এর মত কেন যেন ওর সাথে সখ্যতা করতে চাচ্ছে না। ওর খুব ইচ্ছে করছে কৃষ্টি কে ফোন দিতে কিন্তু মধ্যরাতে ফোন দিলে যদি হিতে বিপরীত হয় সেই ভয়ে দিতে পারছে না। ওর নাম আসলে কৃষ্টি না , আসল নাম হচ্ছে সিঁথি। কিন্তু সিঁথি নামটা আপনের পছন্দ না তাই ও কৃষ্টি নামে ডাকে। অবশ্য এরও একটা কারন আছে। সিঁথির সাথে যেদিন আপনের পরিচয় হয় সেদিন ছিল পয়লা বৈশাখ। তাই সাংস্কৃতিমনা আপন ওর নাম দিয়েছে কৃষ্টি। আপন গান গাইতে জানে না তবে খুব সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতে পারে।
সেবার পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে  যখন আপন কবিতা আবৃত্তি করেছিল, তখন সিঁথি ওকে একটা প্রশংসা সূচক বাক্য বলেছিল। বলেছিল- “খুব সুন্দর হয়েছে” । অপরিচিত একটা মেয়ের ওই তিনটে শব্দ ওর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছিল।  তারপরে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব আর পরবর্তীতে প্রেম। সিঁথি খুব সুন্দর গান গাইতে পারে। মিষ্টি একটা মেয়ের কণ্ঠে মধুর গান শুনতে শুনতে বেশ ভালই কেটেছে আপনের তিনটে বছর। মানুষ বলে প্রেম করলে নাকি পড়াশোনা মাথায় ওঠে। কিন্তু এই কথা টা আপন- সিঁথি জুটির ক্ষেত্রে খাটে না। আপন ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেয়েছে আর সিঁথি এইচ.এস.সি. পাস করেছে জিপিএ-৫ নিয়ে।

আপনের মা –বাবা বিষয়টি জানে কিন্তু মেয়ে আর তার পরিবারের কোন খুত না থাকায় বিনা বাক্যে মেনে নিয়েছে। আর সিঁথির পরিবারেরও না করার কিছু নেই, হয়তো তারাও মেনে নিত। কিন্তু কোত্থেকে যেন এক চিলতে কাল মেঘ এসে ওদের সুন্দর সম্পর্কটা টানা পোড়েন এর মাঝে ফেলে দিল। অন্য সব প্রেমিক- প্রেমিকাদের মত আপন-সিথিদেরও ঝগড়া হয় কিন্ত আজ পর্যন্ত তা কখনো ২৪ ঘণ্টা পার করেনি। কিন্তু কালকের ঝগড়াটা প্রায় ই ২৪ ঘণ্টা হতে চলল। ঘটনা কিছুই না। কাল সিঁথি ওর এক কাজিন এর সাথে  আপন কে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সাজ্জাদ, চট্টগ্রামে থাকে। বেরাতে এসেছে ঢাকায়। কেন যেন ওর হাবভাব আপনের ভাল লাগছিল না। তার উপরে আবার সিঁথি আপনকে কাল বেশি সময় না দিয়ে তার সেই কাজিনের সাথে ঘুরেছে। আপন জানে এই সব “কাজিন” রাই নষ্টের মুল। এদের জন্যই অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।  এটা তো গেল দিনের ঘটনা। রাতে যখন সিঁথি ফোন দিয়েছিল, তখন ও সেই এক ই গল্প- “সাজ্জাদ ভাইয়া, সাজ্জাদ ভাইয়া” । আর সহ্য না করতে পেরে আপন বলে দিয়েছিল, কৃষ্টি যেন আর ওই সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে না ঘোরে। আর যাবে কোথায়! ওই তখন থেকেই কথা বন্ধ। কৃষ্টিও ফোন দিচ্ছে না । আর আপন যে কয়েকবার চেষ্টা করেছে প্রত্যেকবারই ফোনটা বন্ধ পেয়েছে। এখন মনে হচ্ছে ওর এভাবে না বললেই হয়তো পারত।


............... চিন্তার জগত থেকে আপন বাস্তবে ফিরে এল যখন ওর গালে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি পড়ল। আজ আর চাঁদ দেখা হল না। দৌড়ে রুমে চলে যাচ্ছিল, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আপনের ফোন বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনে সিঁথির “কৃষ্টি” লেখা নামটা  জল জল করছে। কাপা হাতে ফোন রিসিভ করেই কৃষ্টির গালি শুনতে পেল...... “ তোমার সাথে আমার রিলেশন যে কিভাবে হয়েছিল, তা ভেবে আমি অবাক হই। তুমি এক বাচ্চার বাবা কে নিয়ে আমার সাথে সন্দেহ করলে? শয়তান, বেয়াদব... আর কি বলব মনে পড়ছে না। ধুর ছাতা। বল, সরি বল”। আপন আস্তে করে “সরি” বলল।    যাক এবারের ঝগড়াটাও ২৪ ঘণ্টা পার  হয়নি!